আন্তর্জাতিক চাপ ও বাধা কোনো কিছুই তোয়াক্কা করছেন না ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। যুক্তরাষ্ট্রের হুমকি, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও ফ্রান্সের নিষেধাজ্ঞার হুঁশিয়ারির পরও গাজায় জোরদার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে তার বাহিনী। প্রায় তিন মাস ধরে গাজায় সর্বাত্মক অবরোধের পর সোমবার সীমিত পরিমাণ ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দিলেও তা বিতরণে বাধা দিচ্ছে তেল আবিব। এর মধ্যে হামলাও চলছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার খবরে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের হামলায় এ পর্যন্ত অন্তত ৫১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার ভোর থেকে চলা হামলায় অন্তত ৫১ ফিলিস্তিনি নিহতের তথ্য পাওয়া গেছে।
এর মধ্যে খবর প্রকাশিত হয়েছে, অধিকৃত পশ্চিম তীরের জেনিনে শরণার্থীশিবির পরিদর্শনে গিয়ে ইসরায়েলি হামলার শিকার হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আরব ও এশিয়ার কূটনীতিকদের একটি প্রতিনিধিদল। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ও বেশ কয়েকটি দেশ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, প্রতিনিধিদলটি তাদের পূর্ব-নির্ধারিত পথ থেকে সরে গিয়ে অননুমোদিত এলাকায় প্রবেশ করায়, তাদের সরিয়ে দিতে সতর্কতামূলক গুলি চালানো হয়েছিল। এতে কেউ হতাহত হননি।
আলজাজিরার হামদা সালহুত, এ ঘটনা সেখানকার বাস্তব পরিস্থিতি তুলে ধরে। এতে বোঝা যায়, অধিকৃত পশ্চিম তীরের যে কোনো ব্যক্তি ইসরায়েলি হামলার শিকার হতে পারে। তিনি আরও বলেন, ‘ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের এ জায়গাগুলো সম্পূর্ণ অবরোধের মধ্যে রয়েছে।’ ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র ও প্রবাসীবিষয়ক মন্ত্রণালয় ‘ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর এই জঘন্য অপরাধের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে, যা ইচ্ছাকৃতভাবে একটি স্বীকৃত কূটনৈতিক প্রতিনিধিদলকে লক্ষ্য করে সরাসরি গুলি চালিয়েছে।’ ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এহুদ ওলমার্ট গাজায় তার দেশের কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে নিরীহ ফিলিস্তিনিদের হত্যার অভিযোগ তুলেছেন। ইসরায়েলি বাহিনীর যুদ্ধ পরিচালনার পদ্ধতি নিয়ে তীব্র সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি এমন মন্তব্য করেছেন।
ওলমার্ট গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডকে ‘যুদ্ধাপরাধের খুব কাছাকাছি’ মন্তব্য করার আগের দিন সোমবার যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, কানাডাসহ কয়েকটি দেশ ইসরায়েলকে সতর্ক করেছে। আর ইসরায়েলের মিত্র যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, শিগগিরই ইসরায়েল অভিযান শেষ না করলে দেশটিকে সমর্থন করবে না ট্রাম্প প্রশাসন।
দেশগুলো ইসরায়েলকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, গাজায় হামলা ও অবরোধ বন্ধ করা না হলে তারা ‘কঠোর পদক্ষেপ’ নিতে বাধ্য হবে। এদিকে গত সপ্তাহে জাতিসংঘের একটি প্যানেল জানিয়েছে, ইসরায়েলের অবরোধের কারণে গাজায় প্রায় পাঁচ লাখ ফিলিস্তিনি মানুষ চরম খাদ্যসংকটে ভুগছেন।
আন্তর্জাতিক চাপ সত্ত্বেও অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এর মধ্যে বুধবার নেতানিয়াহু বলেন, গাজায় চলমান ‘অপারেশন গিদিওনস চ্যারিয়ট’ শেষ হওয়ার পরপরই তার দেশ পুরো উপত্যকা কবজা করে নেবে।
মন্তব্য করুন