অবরুদ্ধ গাজায় এখনো চলছে ইসরায়েলি আগ্রাসন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ইসরায়েলি অভিযানে ৮৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এদিকে গতকাল শুক্রবার উত্তর গাজায় এক বিমান হামলায় অন্তত নারী, শিশুসহ অন্তত ৫৫ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। তবে সীমিত পরিসরে অবরোধ তুলে নেওয়ার তিন দিন পর অবশেষে গাজার উদ্দেশে পাঠানো ৯০ ট্রাক ত্রাণ জাতিসংঘের কাছে হস্তান্তর করে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। গত বুধবার রাতে কেরেম শালোম ক্রসিং থেকে ট্রাকগুলো ওয়ারহাউসে নেওয়া হয়।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত দুদিনে অনাহারে আরও ২৯ জন মারা গেছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মাজেদ আবু রমজান বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। মানবাধিকার সংস্থাগুলো সতর্ক করেছে, পর্যাপ্ত ত্রাণ সরবরাহ নিশ্চিত করতে না পারলে গাজার ২১ লাখ মানুষ চরম অনাহারের মুখে পড়বে, বাড়বে অনাহারে মৃত্যু। মৌলিক খাবারের ঘাটতি এবং আকাশছোঁয়া দামের কারণে পরিস্থিতি আরও সংকটাপন্ন হয়ে উঠছে।
এদিকে বিশ্বজুড়ে গাজায় গণহত্যা ও সামরিক অভিযান বন্ধে তেল আবিবের ওপর চাপ বাড়ছে। এর আগে যুক্তরাজ্য, কানাডা ও ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি অভিযান বন্ধের আহ্বান জানান। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এই তিন দেশের বিরুদ্ধে হামাসকে উৎসাহিত করার অভিযোগ করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স হ্যান্ডেলে নেতানিয়াহু লিখেছেন, হামাস ফিলিস্তিন রাষ্ট্র চায় না, তারা ইহুদি রাষ্ট্র ধ্বংস করতে চায়। তবু ফ্রান্স, ব্রিটেন, কানাডার নেতারা কেন এটা বোঝেন না—তা আমার বোধগম্য নয়। নেতানিয়াহুর দাবি, পশ্চিমা দেশগুলোর পদক্ষেপ হামাসকে ‘চূড়ান্ত পুরস্কার’ দেওয়ার শামিল। বরং শান্তি অগ্রসর করার বদলে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ও কানাডার মার্ক কার্নির বিবৃতি হামাসকে আরও উসকে দিচ্ছে।
বৈশ্বিক চাপের মুখেও ইসরায়েলি অভিযান থেমে নেই। গতকাল উত্তর গাজার এক আবাসিক এলাকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ৫৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতের মধ্যে নারী, শিশু ও বৃদ্ধও রয়েছেন। আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেইর আল বালাহর আল-মাঘাজি শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় হতাহতদের উদ্ধার করে আল আকসা শহীদ হাসপাতালে নেওয়া হয়। এ ছাড়া জাবালিয়ায় অবস্থিত আল আওদা হাসপাতালের সংরক্ষণাগারেও হামলা চালানো হয়। গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস দাবি করছে, হামলার বাস্তব চিত্র আরও ভয়াবহ। তারা জানিয়েছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো বহু মানুষ আটকা পড়ে রয়েছেন এবং অনেককে মৃত বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। সে হিসাবে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৬১ হাজার ৭০০-এর বেশি হতে পারে।
এদিকে গাজার মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনের (ওএইচসিএইচআর) অফিস জানিয়েছে, গত সপ্তাহে ইসরায়েলি হামলায় ৬২৯ জন নিহত হয়েছেন। নিহতের মধ্যে ৩৫৮ জনই বাড়িতে কিংবা তাঁবুতে হামলার শিকার হয়ে নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া বিগত সপ্তাহে অন্তত ৯ জন সাংবাদিকও নিহত হন।
এদিকে ৮০টি দেশ যৌথভাবে গাজায় গণহত্যা বন্ধ ও মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করার জন্য বিবৃতি দিয়েছে। হামাস এ বিবৃতিকে স্বাগত জানিয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে গাজায় মোট নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৩ হাজার ৭৬২-এ।
মন্তব্য করুন