অর্থনীতিবিদ ও গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব হলো- বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার পথে অগ্রসর হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় মতাদর্শিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নীতিমালা প্রণয়ন করা। কিন্তু সরকার সেই কাজের দিকে মনোযোগ না দিয়ে অন্যদিকে গিয়ে জটিলতা সৃষ্টি করে তারপর মান-অভিমান করা, এটা তো কোনো গ্রহণযোগ্য কাজ না। শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে গণতান্ত্রিক নাগরিক কমিটি আয়োজিত ‘গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে কেমন বাজেট চাই’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
বিদেশি কোম্পানির হাতে চট্টগ্রাম বন্দর পরিচালনার দায়িত্ব তুলে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়ে তিনি বলেন, ‘সরকার আজ সক্ষমতা বাড়ানোর বদলে বিকল্প পথ খুঁজছে, যা সমস্যার স্থায়ী সমাধান নয়। বাংলাদেশ সরকারকে জাতীয় সক্ষমতা বাড়াতে হবে। প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও উদ্ভাবন, প্রশাসনিক দক্ষতা, শিক্ষা ও গবেষণা খাতের উন্নয়নে আমাদের মনোযোগ দিতে হবে। অথচ সরকার গত ৯ মাসে সেটিও করতে পারেনি।’ এ সময় তিনি গ্যাস, খনিজ ও বিদ্যুৎ খাতের ওপর বহুজাতিক কোম্পানির কর্তৃত্বের বিরুদ্ধেও কথা বলেন।
বাজেট বাস্তবায়নের অদক্ষতা ও অপচয়ের প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, বর্তমান অর্থবছরের সময়সীমা ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ আমলের ধারাবাহিকতা। এটি এখন আর বাস্তবতাসম্মত নয়। অর্থবছরটি বাংলা সনের সঙ্গে মিলিয়ে ১৪ এপ্রিল থেকে শুরু করা যেতে পারে, অথবা ইংরেজি বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর করা যেতে পারে।
সরকারের অস্থায়ী চরিত্রের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে আনু মুহাম্মদ বলেন, এ সরকার স্থায়ী নয়; কিন্তু কিছু কাঠামোগত পরিবর্তনের সূচনা করতে তাদের কোনো বাধা নেই। বিশেষ করে শিক্ষা ও চিকিৎসা খাতে বাজেট বাড়ানো একটি জরুরি পদক্ষেপ, যা তারা অনায়াসে নিতে পারতেন। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ থাকা উচিত মোট বাজেটের ৫ থেকে ৬ শতাংশ। অথচ বাস্তবে তা ১-২ শতাংশের বেশি নয়।
আলোচনা সভায় বিভিন্ন খাতভিত্তিক বাজেট বিষয়ে বিশ্লেষণমূলক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অর্থনীতি, সমাজনীতি ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা। কৃষি বাজেট তুলে ধরেন মাহা মির্জা, সংস্কৃতির দিকটি আলোচনা করেন সজীব তানভীর। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বাজেট নিয়ে বক্তব্য দেন যথাক্রমে সামিনা লুৎফা ও হারুন উর রশীদ। জেন্ডার বাজেট, বৈষম্য, সামাজিক নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক অভিজ্ঞতা নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও বিশ্লেষণ তুলে ধরেন বিশ্লেষকরা।
মন্তব্য করুন