পরিস্থিতি যেরকমই হোক, নিজেদের ঐক্যবদ্ধ থাকার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা। তারা বলেছেন, একতাবদ্ধ থাকলে অনেক অসাধ্য সাধন করা যায়। তাই নিজেদের মধ্যে কোনো বিভক্তি-বিভাজন নয়। একটি মানবিক বাংলাদেশ গড়তে তারা সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন। গতকাল দুপুরে রাজধানীর টিকাটুলীতে শ্রীশ্রী স্বামী ভোলানন্দগিরি আশ্রমে এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন হিন্দু নেতারা।
সম্মিলিত সনাতন পরিষদের পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ও অভিষেক উপলক্ষে এ অনুষ্ঠান হয়। অনুষ্ঠানে সম্মিলিত সনাতন পরিষদের ৭১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি এবং ১৮ সদস্যের একটি উপদেষ্টা পরিষদ ঘোষণা করা হয়। এটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন সংগঠনের একটি সম্মিলিত জোট।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশন পরিচালন পর্ষদের সভাপতি বিচারপতি সৌমেন্দ্র সরকার। তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে মতের ভিন্নতা থাকতে পারে; কিন্তু সনাতনীদের স্বার্থে আমরা এক ও অভিন্ন। কখনো যেন না ভাবি, আমরা দুর্বল। দুর্বলতাকে কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না।
তিনি বলেন, একতাবদ্ধ থাকলে অনেক অসাধ্য সাধন করা যায়। সুতরাং নিজেদের মধ্যে কোনো বিভক্তি নয়। ঐক্যই হবে আমাদের শক্তি।
স্বামী ভোলানন্দগিরি আশ্রম ট্রাস্টের সভাপতি ও গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, আমরা সনাতনী সমাজের ঐক্য চাই। আমরা কেউ কারও প্রতিপক্ষ নই। আমরা একে অপরের সহযোগী। সুতরাং আমাদের মধ্যে বিভক্তি-বিভাজন যেন না হয়, সে ব্যাপারে সচেষ্ট থাকতে হবে। তিনি বলেন, বিভিন্ন সময় আমাদের ওপর ঝড় বয়ে যায়। সামনে আমাদের অনেক দূর এগোতে হবে। পরিস্থিতি রাজনৈতিক কারণে যেখানেই যাক কিংবা যেমনই হোক, আমাদের ঐক্যটা যেন অটুট থাকে। একটি মানবিক বাংলাদেশ গড়তে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে চাই।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান তপন চন্দ্র মজুমদার। তিনি বলেন, সারা দেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রায় ১০ হাজার একর দেবোত্তর সম্পত্তি বেদখল রয়েছে। যারা দখল করে রেখেছেন, তাদের অনুরোধ করব, এসব সম্পত্তি ছেড়ে দিন।
সম্মিলিত সনাতন পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক হীরেন্দ্র নাথ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ কুমার আচার্যের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও লেখিকা বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়ন্তী রায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মিল্টন দেব প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনের প্রথম সচিব (রাজনৈতিক) গোকুল ভি কের থাকার কথা থাকলেও অনিবার্য কারণে তিনি উপস্থিত হতে পারেননি। তবে তিনি আয়োজকদের কাছে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠান।
পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে প্রকৌশলী শ্যামল চন্দ্র রায়কে নির্বাহী সভাপতি এবং ড. জে কে পাল, অধ্যাপক অশোক তরু, অসিত কুমার মুকুট মণি, সাধন দেবনাথ, জিতেন্দ্র চন্দ্র বর্মণ, রতন চন্দ্র পাল (আর সি পাল), সাধন চন্দ্র মণ্ডল, বিকাশেন্দু সরকার, বীজন কান্তি ধর, বরুন সরকার ও গৌরহরি সাহাকে সহসভাপতি করা হয়েছে। উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন স্বামী পূর্ণাত্মানন্দজী মহারাজ, চারু চন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী, কান্তিবন্ধু ব্রহ্মচারী, সংগীতানন্দ মহারাজ, সুব্রত ঠাকুর, বিচারপতি সৌমেন্দ্র সরকার, প্রফেসর ড. দুর্গাপ্রসাদ ভট্টাচার্য, অধ্যাপক কল্যাণময় সরকার, অ্যাডভোকেট প্রবীর হালদার প্রমুখ।
মন্তব্য করুন