আতাউর রহমান
প্রকাশ : ২১ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ২১ মে ২০২৫, ০৭:৩১ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ঢাকায় বিমানবন্দরে পাইলটদের আতঙ্ক ৭৪ প্রজাতির পাখি

প্লেনে বার্ড হিট
ঢাকায় বিমানবন্দরে পাইলটদের আতঙ্ক ৭৪ প্রজাতির পাখি

পাখির আঘাতে (বার্ড হিট) তার্কিশ এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজের ইঞ্জিনে আগুন ধরে যাওয়ার পর ফের আলোচনায় এসেছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকায় পাখির অবাধ বিচরণের বিষয়টি। গবেষণা বলছে, বিমানবন্দর ও আশপাশের এলাকায় অন্তত ৭৪ প্রজাতির পাখির আনাগোনা রয়েছে। বিমানবন্দরের ভেতরে ও আশপাশের এলাকায় পাখির এমন বিচরণে প্রতিনিয়তই পাইলটকে আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হচ্ছে। এই পাখি তাড়াতে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে রীতিমতো ‘যুদ্ধ’ করতে হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য মিলেছে।

ফ্লাইট সেফটির সঙ্গে যুক্ত বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের বিমানবন্দরগুলোতে বার্ড স্ট্রাইকের মোট হার হাজারে ১ দশমিক ৭৩। তবে এই হার বৈশ্বিকভাবে একের নিচে (দশমিক ৫০)। তবে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, এই হার বৈশ্বিক মানদণ্ডে নেওয়ার জন্য নানা ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে গত এক বছরে এই ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে এবং বার্ড হিট বা বার্ড স্ট্রাইকের পরিমাণও কমে এসেছে। পাখি তাড়াতে লেজার লাইট ব্যবস্থা, পাখি তাড়ানোর সাউন্ড বার (১২৮ ডেসিবেল শব্দযন্ত্র) এবং পাখি শনাক্ত করতে পারে এমন বিশেষ ক্যামেরাও রয়েছে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও অন্য একটি বেসরকারি এয়ারলাইন্সের একাধিক পাইলটের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, বিমানবন্দরে পাখির বিচরণের জন্য প্রতিনিয়তই তাদের আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়। পাইলটদের সতর্কতার কারণে এ ধরনের দুর্ঘটনা কমলেও উড্ডয়ন ও অবতরণের সময়ে তাদের আতঙ্ক থেকেই যাচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্লেনের বার্ড হিট ঠেকাতে শাহজালালে ৫টি গ্যাস ক্যানন যন্ত্র বসানো হয়েছে। তবে মাঝেমধ্যে এগুলোর বেশিরভাগই অকেজো থাকে। তা ছাড়া পাখি তাড়ানোর কাজে নিয়োজিত কর্মীদেরও দক্ষতায় ঘাটতি আছে। দায়িত্ব পালনেও তাদের উদাসীনতা রয়েছে।

অবশ্য বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া কালবেলাকে বলেন, পাখির সমস্যাটি পৃথিবীর সব বিমানবন্দরেই রয়েছে। তবে দেশের বিমানবন্দরগুলোতে নিরাপদ উড্ডয়ন-অবতরণের জন্য নানা উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। সব অপারেটরের সঙ্গে বৈঠক করে এ বিষয়ে নিয়মিত সতর্ক করা হয়। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পাখির আনাগোনা ঠেকাতে বিশদ সমীক্ষাও করা হয়েছে। সে অনুযায়ী কাজ করায় এ ধরনের দুর্ঘটনা একেবারেই কমে এসেছে।

বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, শাহজালাল বিমানবন্দরে পাখির অনাকাঙ্ক্ষিত বিচরণ ঠেকাতে দিনে-রাতে সংশ্লিষ্ট কর্মীরা কাজ করছেন। বিষয়টি নিয়ে সব অংশীজন সতর্ক রয়েছে।

গত বছরের শেষের দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পাখির বিচরণ নিয়ে একটি গবেষণা সমীক্ষা করা হয়। ঢাকায় শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল হক বেগ ও গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আ ন ম আমিনুর রহমানের নেতৃত্বে গবেষণাটি হয়।

ড. আনোয়ারুল হক বেগ কালবেলাকে বলেন, তারা সমীক্ষা করে দেখেছেন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও এর আশপাশের ৪ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে অন্তত ৭৪ প্রজাতির পাখির বিচরণ রয়েছে, যা একটি বিমানবন্দরে উড্ডয়ন-অবতরণে অত্যন্ত ঝুঁকি তৈরি করে। তবে সব প্রজাতিই উড়োজাহাজের জন্য ক্ষতিকর নয়। বিমানবন্দর এলাকায় কেন এত পাখির বিচরণ এবং তা ঠেকাতে করণীয় সম্পর্কে তারা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে প্রতিবেদন দেন।

এই অধ্যাপক বলেন, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও আশপাশের এলাকায় লতাপাতা, গুল্ম, অপ্রয়োজনীয় জঙ্গল-ঝোপঝাড়, জলাশয় ও জলজ প্রাণী রয়েছে। যার জন্য এখানে পাখির আনাগোনা বেশি। এ ছাড়া আশপাশের খাল, নালা ও জলাশয় থাকায় পাখির আনাগোনা বেশি হচ্ছে। বিমানবন্দর ও আশপাশের এলাকায় পাখি অভয়াশ্রম করতে পারে এবং পাখির খাবার যাতে তৈরি হতে না পারে—এমন পরিবেশ সৃষ্টি করতে বলা হয়েছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে। এ ছাড়া স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে নানা সুপারিশ করা হয়েছে। গত এক বছরে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ এসব সুপারিশের অনেকটাই পালন করায় পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সাবেক পাইলট ক্যাপ্টেন আবদুল্লাহ কালবেলাকে বলেন, বিমানে তার ২০ বছরের ফ্লাইট জীবনে কয়েক দফায় বার্ড হিটের মুখোমুখি পড়তে হয়েছিল। তিনি বলেন, উড়োজাহাজ উড্ডয়ন ও অবতরণের সময় একজন পাইলটের সাধারণত ১০ হাজার ফুট পর্যন্ত পাখির আতঙ্কে থাকতে হয়। পাখিদের মধ্যে চিল সবচেয়ে বেশি আতঙ্ক সৃষ্টি করে।

তিনি বলেন, উড্ডয়নের সময় একটি উড়োজাহাজ সাধারণত ঘণ্টায় ২০০ থেকে ৩০০ কিলোমিটার গতিতে চলে। তখন কোনো পাখি হিট করলে ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে। সাধারণত পাখিগুলো সামনের উইন্ডশিল্ডে আঘাত করে। গতিবেগের কারণে তা এই উইন্ডশিল্ড ভেঙে ভেতরে ঢুকে যেতে পারে। অনেক সময় ইঞ্জিনের ভেতর পাখি আঘাত করতে পারে। এটা অতি ভয়ংকর। তখন ইঞ্জিনে আগুন ধরে যেতে পারে এবং বিকল হয়ে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

ক্যাপ্টেন আবদুল্লাহ বলেন, বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের নানা উদ্যোগের পাশাপাশি এসব ক্ষেত্রে ককপিটের পাইলটদের বেশি সতর্ক থাকতে হয়। পাখিটি চোখের নজরে থাকলে ডান-বাম টার্ন করে চলতে হয়। অবতরণের সময় ল্যান্ডিং লাইট জ্বালানো থাকলে ভয়ে পাখি সরে যায়।

এই পাইলট চিলকে পাইলটদের জন্য বেশি আতঙ্কের কারণ জানালেও গবেষক ড. আনোয়ারুল হক বেগ বলছেন, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেও তারা চিলের ব্যাপক উপস্থিতি পেয়েছেন। অপেক্ষাকৃত উঁচুতে উড়তে সক্ষম এই পাখিটি বিমানবন্দরের আশপাশের এলাকাতেও রয়েছে। বিশেষ করে বালু নদী, হেমায়েতপুর, মিরপুর চিড়িয়াখানা ও বোটানিক্যাল গার্ডেন এলাকায় শত শত চিলের উপস্থিতি রয়েছে। এরাই খাদ্যের সন্ধানে ঘুরতে ঘুরতে এয়ারপোর্ট এলাকায় চলে আসে, যা বৈমানিকদের জন্য আতঙ্কের কারণ হচ্ছে। তা ছাড়া এই চিল বিমানের উড্ডয়ন-অবতরণের শব্দের সঙ্গেও দ্রুত মিশে যেতে পারছে, শব্দ এদের খুব ক্ষতি করতে পারছে না।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

প্রথম শ্রেণির পৌরসভায় নেই ডাম্পিং স্টেশন

ঈদে হাট কাঁপাতে আসছে ‘লালু সর্দার’ ও ‘কালিয়া’

ছুটির দিনে ঘুরতে গিয়ে খুন হলেন আব্দুল্লাহ

মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে যুবকের মৃত্যু, পরিবারের দাবি হত্যা

চরে হঠাৎ জোয়ারের পানি, মৃত অবস্থায় ৩৪ গরু উদ্ধার

মার্কিন মালিকানায় গেল দ্য টেলিগ্রাফ

দুপুরের মধ্যে ঢাকাসহ ১১ জেলায় ঝড়ের শঙ্কা

আজ কেমন থাকবে ঢাকার আবহাওয়া 

ঈদুল আজহা : ট্রেনের ৩ জুনের টিকিট বিক্রি আজ

গাজার উত্তরে এখনো খাবার যায়নি, আরও মৃত্যু ৭৬

১০

২৪ মে : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

১১

২৪ মে : আজকের নামাজের সময়সূচি

১২

হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে প্রতারণার ফাঁদ, অতঃপর

১৩

‘যারা আজ সবচেয়ে বেশি শিক্ষিত, তারাই মাকে দূরে রাখতে চায়’

১৪

চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতার পদত্যাগ

১৫

চবি তেপান্তর সাহিত্য সভার নেতৃত্বে আবদুল মোমেন-রিয়াদ উদ্দিন

১৬

বৈষম্যবিরোধী সমন্বয়কদের দুগ্রুপের সংঘর্ষে আহত ৪

১৭

সৈকতে পড়ে আছে মৃত ডলফিন, ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ

১৮

পতেঙ্গা সৈকতে গোলাগুলি, ঢাকাইয়া আকবরসহ গুলিবিদ্ধ ২

১৯

কারাবন্দি সোহাগের মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা

২০
X