দেশের সাত জেলার সীমান্ত দিয়ে আরও ১০৯ জনকে বাংলাদেশে পুশইন করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। এর মধ্যে ফেনীতে ৩৯, পঞ্চগড়ে ২১, লালমনিরহাটে ২০, কুমিল্লায় ১৩, মৌলভীবাজারে ৭, খাগড়াছড়িতে পাঁচ ও দিনাজপুরে চারজন। তাদের মধ্যে নারী ও শিশু রয়েছে।
বিজিবি জানায়, স্থানীয়দের কাছে খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার ভোরে ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার আমজাদহাটের খেজুরিয়া সীমান্ত থেকে ১২ জন, নোয়াপুর থেকে ১৫ এবং ছাগলনাইয়ার যশপুর থেকে ১২ জনকে আটক করা হয়। তারা কুড়িগ্রাম ও ঠাকুরগাঁও জেলার বাসিন্দা। তাদের মধ্যে ১২ জন পুরুষ, নারী ৯ ও ১৮ শিশু রয়েছে। পরে ১২ জনকে ছাগলনাইয়া এবং ২৭ জনকে ফুলগাজী থানায় সোপর্দ করা হয়।
ফেনী-৪ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা পুশইন ঠেকাতে সতর্ক অবস্থায় রয়েছি। পাশাপাশি সীমান্ত এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে, টহল বাড়ানো হয়েছে। আনসার ভিডিপি ও স্থানীয় জনগণকে নিয়ে বিজিবি কাজ করছে।
এদিকে, পঞ্চগড় সদর উপজেলার জয়ধরভাঙ্গা বড়বাড়ী সীমান্ত দিয়ে নারী-পুরুষ, শিশুসহ ২১ জনকে পুশইন করা হয়েছে। বুধবার রাত ৪টায় ৬ নারী, ২ পুরুষ ও ১৩ শিশুকে আটক করে বিজিবির টহল দল। তারা সবাই বাংলাদেশি।
বিজিবি সূত্র জানায়, আটক ব্যক্তিরা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন তারা দীর্ঘদিন ভারতে অবৈধভাবে অবস্থান করে কাজ করছিলেন। ২১ মে পুলিশ তাদের গুজরাট এলাকা থেকে কলকাতায় নিয়ে আসে। সেখান থেকে পরে টিয়াপাড়া বড়বাড়ী সীমান্ত দিয়ে বিএসএফ তাদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয়।
নীলফামারী ৫৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শেখ মোহাম্মদ বদরুদ্দোজা বলেন, আমাদের টহলদল সীমান্তে তাদের আনাগোনা দেখে আটক করে। বিএসএফের সঙ্গে পতাকা হয়েছে। আমরা তাদের কাছে জানতে চেয়েছি, তারা কেন অবৈধ উপায়ে ওই নাগরিকদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠালো। তিনি বলেন, সীমান্তে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিজিবি সতর্ক রয়েছে।
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম সীমান্ত দিয়ে ২০ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে ৯ জন নারী ও ৭ শিশু ও দুজন পুরুষ রয়েছে। বুধবার রাতে রহমতপুর ধবলসতী গাটিয়ারভিটা এবং শ্রীরামপুর ইউনিয়নের সীমান্ত সংলগ্ন বাজার এলাকায় তাদের পুশইন করে বিএসএফ। বিজিবির ধবলসুতী ক্যাম্প কমান্ডার নায়েক সুবেদার আব্দুল মতিন এ তথ্য জানিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গাটিয়ারভিটা ও শ্রীরামপুর সীমান্ত দিয়ে পুশইনের পর তারা পাটগ্রামের দিকে যাচ্ছিল। এ সময় স্থানীয়দের সন্দেহ হলে তাদের আটক করে বিজিবিকে খবর দেওয়া হয়।
কুমিল্লা সদর উপজেলার গোলাবাড়ী সীমান্ত এলাকা বৃহস্পতিবার রাতে ১৩ জনকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়। পরে বিজিবি তাদের আটক করে। তাদের মধ্যে পুরুষ ৩ জন, নারী ৩ ও ৭ শিশু রয়েছে। তারা সবাই কুড়িগ্রাম জেলার বাসিন্দা। বিজিবির কুমিল্লা ব্যাটালিয়ন (১০ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মীর আলী এজাজ জানান, যাচাই-বাছাই শেষে তাদের সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এ ছাড়া গতকাল সকালে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের মুরইছড়া সীমান্ত দিয়ে সাত বাংলাদেশিকে পুশইন করা হয়। তাদের মধ্যে ২ জন পুরুষ, ২ নারী ও ৩ শিশু রয়েছে। তাদের বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলায়। ৪৬ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ এস এম জাকারিয়া এ তথ্য জানিয়েছেন।
খাগড়াছড়ির রামগড় সীমান্ত দিয়ে গতকাল ভোরে পাঁচজনকে পুশইন করেছে বিএসএফ। স্থানীয় ও বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, সীমান্ত পার হয়ে রামগড়-ফেনী সড়কের সোনাইপুল বাজারে যাত্রী চাউনিতে অবস্থান করছিলেন তারা। স্থানীয়রা তাদের দেখে আটক করে বিজিবিকে খবর দেয়। তারা কুড়িগ্রামের জেলার বাসিন্দা।
এদিকে, ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার বৈরচুনা সীমান্ত এলাকা থেকে দুই বাংলাদেশি নারী এবং দিনাজপুরের বিরল সীমান্ত থেকে দুজন পুরুষকে আটক করা হয়েছে। তারা নড়াইল, সাতক্ষীরা ও যশোরের বাসিন্দা। (প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রতিনিধিরা)
মন্তব্য করুন