বানররাও অপহরণ করে! শুনে চোখ কপালে উঠলেও এমন ঘটনার প্রমাণ মিলেছে উত্তর আমেরিকার দেশ পানামার এক দ্বীপে। স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এমন আচরণ হতবাক করেছে বিজ্ঞানীদের। বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করেছেন একদল গবেষক। কিন্তু বানরের ক্ষেত্রে এমন ঘটনা তারা এখনো বুঝে উঠতে পারেননি।
সম্প্রতি কারেন্ট বায়োলজি নামের এক সাময়িকীতে এ-সংক্রান্ত গবেষণার বিস্তারিত প্রকাশিত হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ২০২২ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে দ্বীপের বিভিন্ন অংশে ক্যামেরা স্থাপন করা হয়। সেসব ক্যামেরায় অন্তত ১১টি হাওলার বানরের বাচ্চা ক্যাপুচিন বানরদের হাতে অপহৃত হওয়ার ঘটনা ধরা পড়েছে।
জার্মানির দ্য ম্যাক্স প্ল্যাংক ইনস্টিটিউট অব অ্যানিমেল বিহেভিয়ারের গবেষক জো গোল্ডসবরো বলেছেন, এটি খুবই চমকপ্রদ আবিষ্কার। প্রাণীজগতে আমরা এ রকম কিছু আগে দেখিনি।
ক্যাপুচিন প্রজাতির বানরের আকার পোষা বিড়ালের মতো, এরা দীর্ঘজীবী ও চালাক। এ প্রজাতির বানররা একে অপরের কাছ থেকে নতুন নতুন আচরণ শেখে। এমনকি পানামায় ক্যাপুচিন বানরদের একটি দল শক্ত আবরণযুক্ত খাবার (যেমন-বাদাম ও সামুদ্রিক খাবার) ভাঙার জন্য পাথরের হাতিয়ার ব্যবহার করতে শিখে গেছে বলে জানান গবেষকরা।
ক্যাপুচিন বানরের হাতিয়ার ব্যবহার প্রত্যক্ষ করতে ৮০টিরও বেশি ক্যামেরা স্থাপন করেছিলেন ম্যাক্স প্ল্যাংক ইনস্টিটিউট ও স্মিথসোনিয়ান ট্রপিক্যাল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষকরা। তবে ২০২২ সালের প্রথম দিকে প্রথমবারের মতো ক্যাপুচিন বানরের সঙ্গে হাওলার বানরের বাচ্চাকে দেখে তারা অবাক হয়ে যান।
ভিডিও ফুটেজে গবেষকরা দেখেছেন, ক্যাপুচিন বানররা তাদের পিঠে বাচ্চা ও হাতে পাথরের হাতিয়ার নিয়ে হাঁটছে। এ সময় তারা চেঁচামেচি ও একটু পরপরই হাতে থাকা পাথরে আঘাত করে শব্দ করছিল। তবে সেসব ফুটেজে অপহরণের মুহূর্তগুলো ধারণ করা সম্ভব হয়নি। হাওলার বানররা দিনের বেশিরভাগ সময়ই গাছে কাটায়। সেখানেই অপহরণের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে ধারণা বিজ্ঞানীদের।
ম্যাক্স প্ল্যাংক ও স্মিথসোনিয়ানের সহ-লেখক মার্গারেট ক্রোফুট বলেছেন, এ বিষয়ে আমাদের ধারণা খুবই সীমিত।
কেন ক্যাপুচিন বানররা এমন আচরণ করছে—এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেন গবেষকরা। গবেষক দলটি প্রাথমিকভাবে ধারণা করেন, ক্যাপুচিন বানররা হয়তো শিকার করা কিংবা সহিংসতার প্রবণতা থেকে এমন আচরণ করছে। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, অপহরণের পর ক্যাপুচিন বানরের বাচ্চাগুলোর প্রতি কোনো ধরনের আক্রমণাত্মক আচরণ করেনি, উল্টো বাচ্চাগুলোকে আদর-যত্ন করছিল।
বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এটি এক ধরনের আচরণগত বিভ্রান্তি হতে পারে। এটির সূত্রপাত হয়তো কোনো এক ক্যাপুচিনের মাতৃত্বের ভুল প্রবৃত্তির কারণে। পরে এটি অন্যদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে।
ফ্রান্সের সিএনআরএস ইনস্টিটিউট ফর কগনিটিভ সায়েন্সেসের গবেষক ক্যাথেরিন ক্রকফোর্ড এটিকে বন্যপ্রাণীর বিরল সামাজিক ও আচরণগত ঘটনা বলে বর্ণনা করেছেন। সূত্র: সিএনএন।
মন্তব্য করুন