নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলায় পোস্টার লাগানোকে কেন্দ্র করে বিএনপির এক পক্ষের হামলায় অপর পক্ষের একজন নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার বাকলজোড়া ইউনিয়নের আব্বাছনগর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন দুর্গাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল হাসান। হামলায় অন্তত ছয়জন আহত হয়। অন্যদিকে গাজীপুরের টঙ্গীতে বিএনপির দুপক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে পুলিশ, সাংবাদিকসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছে। এ ছাড়া মেহেরপুর সদর উপজেলায় বিএনপির দুপক্ষের সংঘর্ষে আহত হয়েছেন কয়েকজন। কালবেলার প্রতিনিধির পাঠানো খবর:
পুলিশ ও স্থানীয়দের বরাত দিয়ে নেত্রকোনা প্রতিনিধি জানান, দুর্গাপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট হামিদুর রহমান রাশেদ আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে দুর্গাপুরে কিছু শুভেচ্ছামূলক পোস্টার পাঠান। তার লোকজন দুর্গাপুর বাজারসহ স্থানীয় বিএনপি অফিসে সেই পোস্টার লাগাতে গেলে উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জামাল মাস্টার বাধা দেন। পরে হামিদুর রহমান রাশেদ বিষয়টি দুর্গাপুর থানা পুলিশকে জানান। এতে জামাল মাস্টার আরও ক্ষিপ্ত হন। পরে তার নেতৃত্বে রাত সাড়ে ৮টার দিকে ২৫-৩০টি মোটরসাইকেলে কিছু ব্যক্তি আব্বাছনগর গ্রামে গিয়ে হামিদুর রহমান রাশেদের বাড়িতে হামলা চালায়। তারা আব্বাছনগর বাজারেও হামলা ও ভাঙচুর করে। হামলায় রাশেদের
দূর-সম্পর্কের ভাতিজা শফিকুল ইসলাম সফু (৪০) নিহত এবং ৬ জন আহত হন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়।
নিহতের স্বজনদের দাবি, হামলার সময় জামাল মাস্টারের লোকজন কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে এবং শফিকুল ইসলাম গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।
দুর্গাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল হাসান জানান, লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। হামলায় জড়িতদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
এদিকে, জামাল মাস্টার দাবি করেছেন, দুর্গাপুরে কারোর পোস্টার লাগাতে বাধা দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, প্রতিপক্ষের বাড়ি ১৫ কিলোমিটার দূরে, সেখানে হামলার কোনো ঘটনা ঘটেনি। রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় এ ধরনের অভিযোগ করা হচ্ছে।
টঙ্গীতে বিএনপির দুই পক্ষে দফায় দফায় সংঘর্ষ, আহত ১৫: গাজীপুরের টঙ্গীতে ঝুট নামানোকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুপক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ককটেল বিস্ফোরণে পুলিশ, সাংবাদিক ও স্থানীয় বাসিন্দাসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর পর্যন্ত গাজীপুরা এলাকার স্যাটার্ন কারখানার সামনে এই সংঘর্ষের ঘটনায় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
আহতদের মধ্যে রয়েছেন দৈনিক কালবেলার টঙ্গী প্রতিনিধি মহিউদ্দিন রিপন, এশিয়ান টেলিভিশনের গাজীপুর প্রতিনিধি আরিফ চৌধুরী, আনন্দ টিভির রায়হান মৃধা, সংবাদকর্মী মারুফ, পুলিশ সদস্য আজিজ ও ফরহাদ। সংঘর্ষে স্থানীয় আরও কয়েকজন আহত হন।
জানা যায়, ঘটনার সূত্রপাত ঘটে বিএনপির ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক কাজী হুমায়ুনের ঝুট নামানোকে কেন্দ্র করে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, ঝুট ব্যবসা থেকে প্রাপ্ত অর্থ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অর্থায়নে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ নিয়ে বিএনপির অপর অংশের নেতাকর্মীরা বাধা দিলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।
স্থানীয় বিএনপি নেতা আল মামুন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শিশু-কিশোর মেলার কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা দিলশান আরা বেগম নিয়মিত ওই কারখানা থেকে ঝুট নামিয়ে আওয়ামী লীগকে অর্থ দিচ্ছেন। এর প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার আমরা মানববন্ধন করেছিলাম। আজ আবার কাজী হুমায়ুনকে ঝুট নামাতে দেখা গেছে। তিনি আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে ককটেল হামলা চালিয়েছেন।’
কাজী হুমায়ুন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমার প্রতিষ্ঠান নূর এন্টারপ্রাইজের বৈধ চুক্তিপত্র রয়েছে। আমরা নিয়মিতভাবে ওয়েস্টেজ মালপত্র নিচ্ছি। আল মামুন ও তার লোকজন আমাদের ওপর অতর্কিতে হামলা চালায়।’
টঙ্গী পশ্চিম থানার ওসি ইসকান্দার হাবিবুর রহমান জানান, সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনার তদন্ত চলছে, আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা হয়নি।
মেহেরপুরে বিএনপির সম্মেলনকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের মধ্যে হামলা-সংঘর্ষ: মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপিতে ইউনিয়ন বিএনপির সম্মেলনকে কেন্দ্র করে গতকাল শুক্রবার দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব কামরুল হাসানের লোকজনের অভিযোগ, আমঝুপি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ও তার ভাই সফিকুল ইসলামসহ তাদের কর্মী সমর্থকরা হামলা চালিয়েছে। তারা সম্মেলন স্থলে নেতাকর্মীদের আসতে বাধা দেয়। এ সময় প্রতিরোধ করতে গেলে নেতাকর্মী ও সমর্থকরা হামলার শিকার হয়।
উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলামের বক্তব্য জানতে তাকে কয়েকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। সম্মেলন স্থলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
মেহেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেজবাহ উদ্দিন বলেন, সংঘর্ষের পরপরই পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন