কলমের এক খোঁচায় হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির পথ বন্ধ করে দিয়েছিল ট্রাম্প প্রশাসন। গত বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তি করার অনুমোদন বাতিল করে। ঘোষণা অনুযায়ী, নতুন কোনো বিদেশি শিক্ষার্থী হার্ভার্ডে ভর্তি হতে পারবেন না। ফলে হার্ভার্ডে প্রায় ৬ হাজার ৮০০ শিক্ষার্থীর মধ্যে দেখা দেয় অনিশ্চয়তা। ট্রাম্প প্রশাসন জানায়, তাদের দেওয়া ছয়টি শর্ত পূরণ করলেই আবার বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারবে প্রতিষ্ঠানটি। জবাবে হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ ট্রাম্প প্রশাসনের এ নির্দেশনাকে অবৈধ বলে দাবি করে বোস্টনে মামলা করে। মামলাটি মার্কিন ডিস্ট্রিক্ট জাজ অ্যালিসন বারোজের কাছে ন্যস্ত করা হয়। এ মামলার পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বোস্টনের আদালত ট্রাম্প প্রশাসনের এ আদেশের ওপর স্থগিতাদেশ আরোপ করেন। একই নির্দেশনায় বিদেশি শিক্ষার্থীদের অন্য প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তরও বন্ধ করা হয়েছে।
মামলায় হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আইনি সহায়তায় তারা প্রশাসনের এ সিদ্ধান্ত সাময়িকভাবে শিথিল করার চেষ্টা চালাবে। বোস্টনে দায়ের করা এ মামলায় প্রশাসনের পদক্ষেপকে আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন বলে অভিহিত করা হয়েছে। মামলার নথিপত্রে হার্ভার্ড উল্লেখ করেছে, ‘সরকার কলমের খোঁচায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক-চতুর্থাংশ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখা শিক্ষার্থীদের নাম মুছে ফেলার চেষ্টা করছে।’
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র আগেই জানিয়েছিল, প্রশাসনের এ সিদ্ধান্ত আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। এর আগেও পাঠ্যক্রম, ভর্তি নীতিমালা এবং নিয়োগ প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপের অভিযোগে হার্ভার্ড ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল।
শুক্রবার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট অ্যালান গার্বার জানান, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তদন্তে অসহযোগিতা এবং ইহুদিবিদ্বেষের যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তার কোনো ভিত্তি নেই। এমনকি প্রশাসনিক তদন্তেও হার্ভার্ডের অসহযোগিতার অভিযোগ সত্য নয়। বরং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে পর্যাপ্ত সহযোগিতা করেছে।
গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, বিদেশি শিক্ষার্থীরা এ প্রতিষ্ঠানের প্রাণ। তাদের থেকে সংগ্রহ করা টিউশন ফি দিয়েই বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার যাবতীয় অর্থ সংগ্রহ করা হয়।
হার্ভার্ডকে প্রশাসনের ৬ শর্ত: এর আগে বিদেশি শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া চালিয়ে যেতে হলে হার্ভার্ডকে ছয়টি শর্ত দিয়েছিল মার্কিন প্রশাসন। এজন্য তাদের ৭২ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেওয়া হয়। শর্তগুলো হচ্ছে—বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া সব শিক্ষার্থীর বিগত পাঁচ বছরের রেকর্ড দেওয়া; বিগত পাঁচ বছরের শিক্ষার্থীদের হিংসাত্মক কার্যক্রমের রেকর্ড; শিক্ষার্থীদের আচরণ ও শৃঙ্খলাজনিত কার্যক্রমের রেকর্ড দেওয়া; শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদমূলক কার্যক্রমের তথ্য দেওয়া; বিশ্ববিদ্যালয়ে সহপাঠী বা কর্মীদের অধিকার লঙ্ঘনবিষয়ক কর্মকাণ্ডের তথ্য দেওয়া। কিন্তু হার্ভার্ড প্রশাসন সাফ জানিয়েছে, শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষার স্বার্থে তারা এসব তথ্য সরবরাহ করবে না।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটির সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোয়েম গতকাল মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, এ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোনো শিক্ষার্থী তার জাতি কিংবা বর্ণের কারণে যেন বৈষম্যের শিকার না হন, তা নিশ্চিত করা জরুরি। আমরা এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়ার জন্যই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে শেষ পর্যন্ত ট্রাম্প প্রশাসনের এ সিদ্ধান্ত আর কার্যকর থাকেনি।
যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনায় চীন: হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ করার ঘোষণা আসার পর থেকেই চীনা সংবাদমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া বিদেশি শিক্ষার্থীদের বড় অংশ আসেন চীন থেকে। ২০২৪ সালে বিশ্ববিদ্যালয় সব শাখায় যতজন শিক্ষার্থী ভর্তি করে তার মধ্যে চীনা শিক্ষার্থী ছিল ১২০৩ জন।
বেইজিংয়ে শুক্রবার ব্রিফিংয়ে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শিক্ষাগত সহযোগিতা পারস্পরিকভাবে উপকারী। চীন এর রাজনীতিকরণের বিরোধিতা করে। মার্কিন পক্ষের প্রাসঙ্গিক পদক্ষেপগুলো কেবল তাদের নিজস্ব ভাবমূর্তি এবং আন্তর্জাতিক বিশ্বাসযোগ্যতার ক্ষতি করবে। তিনি আরও বলেন, বেইজিং বিদেশে চীনা শিক্ষার্থী এবং পণ্ডিতদের অধিকার ও স্বার্থ দৃঢ়ভাবে রক্ষা করবে।
মন্তব্য করুন