রক্তদান একটি মহৎ ও মানবিক কাজ। এটি যেমন অন্যের জীবন বাঁচায়, তেমনি দাতার শরীর ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও বেশ উপকারী। তবে নিয়মিত রক্তদানকারীদের জন্য কিছু যত্ন নেওয়া ও সচেতন থাকা অত্যন্ত জরুরি। যাতে রক্তদাতারা সুস্থ থাকেন এবং নিরাপদভাবে রক্তদান কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে পারেন।
পানি পান ও পরিমাণ: রক্তদানের আগে ও পরে পর্যাপ্ত পানি পান খুব গুরুত্বপূর্ণ। রক্তদানের অন্তত ২৪ ঘণ্টা আগে থেকে পানি পানের পরিমাণ বাড়ানো উচিত। পুরুষের ক্ষেত্রে দিনে অন্তত আড়াই থেকে তিন লিটার পানি এবং নারীর ক্ষেত্রে দুই থেকে আড়াই লিটার পানি যথেষ্ট। রক্তদানের পর অন্তত চার থেকে ছয় গ্লাস অতিরিক্ত পানি পান করলে শরীরে রক্ত ভলিউম দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে যায়।
খাদ্যাভ্যাস: রক্তদাতার আয়রনসমৃদ্ধ খাবার নিয়মিত খাওয়া উচিত। যেমন: লাল মাংস, কলিজা, ডিমের কুসুম, সবুজ শাকসবজি, বিশেষ করে পালংশাক, মুলাশাক)। এ ছাড়া ডাল, ছোলা, কলা, খেজুর, ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল যেমন- কমলা, মাল্টা, যা আয়রন শোষণে সহায়ক। রক্তদানের পরে দুধ, ফল ও হালকা খাবার গ্রহণে শরীর দ্রুত চাঙ্গা হয়।
কারা রক্তদান করতে পারবেন: ১৮ থেকে ৬০ বছরের যে কোনো শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ ও সক্ষম ব্যক্তি, যার শরীরের ওজন ৪৫ কেজির উপরে, তারা নিয়মিত রক্তদান করতে পারেন। তবে রক্ত দিতে হলে কিছু রোগ থেকে মুক্ত থাকতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশ অনুযায়ী, নিরাপদ রক্ত সঞ্চালনের জন্য রক্তদাতার শরীরে কমপক্ষে পাঁচটি রক্তবাহিত রোগের অনুপস্থিতি পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হবে। এ রোগগুলো হলো- হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস সি, এইচআইভি বা এইডসের ভাইরাস, ম্যালেরিয়া ও সিফিলিস।
রক্তদানের সীমা: পুরুষরা বছরে সর্বোচ্চ তিনবার রক্ত দিতে পারেন অর্থাৎ প্রতি চার মাসে একবার। নারীরা যেহেতু নিয়মিত মাসিক ও গর্ভকালীন শারীরিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যান, তাই বছরে সর্বোচ্চ দুবার অর্থাৎ প্রতি ছয় মাসে একবার রক্তদান করতে পারেন।
অ্যাফেরেসিস প্লাটিলেট দাতাদের জন্য নির্দেশনা: অ্যাফেরেসিসে শুধু প্লাটিলেট সংগ্রহ করা হয়, তাই শরীরে রক্তের প্রধান উপাদানগুলো থেকে যায়। এ প্রক্রিয়া অপেক্ষাকৃত সহজ হলেও শারীরিকভাবে প্রস্তুতি নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। প্লাটিলেট দানের ২৪ ঘণ্টা আগে থেকে পানিশূণ্যতা যেন না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার (দুধ, দই, চিজ) খাওয়া উচিত, কারণ প্লাটিলেট সংগ্রহে ব্যবহৃত সাইট্রেট রক্তের ক্যালসিয়াম কমাতে পারে। প্লাটিলেট দানের পর পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও হালকা খাবার গ্রহণ জরুরি।
নিয়মিত রক্তদান একটি সামাজিক, মানবিক ও স্বাস্থ্যকর চর্চা। তবে রক্তদাতার শরীরের যত্নও সমান গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে সঠিক খাদ্য, পানির পরিমাণ ও সময়জ্ঞান থাকলে একজন দাতা দীর্ঘদিন নিরাপদে রক্তদান করতে পারেন।
ডা. আশরাফুল হক
সহকারী অধ্যাপক
ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগ
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ
মন্তব্য করুন